সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আকিদা বিভ্রান্তকারী পথ থেকে সাবধান

শায়খ হোসাইন আলে শায়খ:

দুনিয়ায় মানুষের অন্তর, কথাবার্তা, কাজকর্ম ও আচার-আচরণ থেকে শুরু করে সবকিছুর লক্ষ্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের বাস্তবায়ন। এটা মহাগ্রন্থ কোরআন মাজিদের মহৎ উদ্দেশ্য এবং নবী-রাসুলদের রেসালাতের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে এ ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো- মানুষকে কোরআন-সুন্নাহর প্রতিষ্ঠিত ও সন্দেহমুক্ত সুস্পষ্ট দলিল থেকে কিছু সংশয়পূর্ণ বিষয়ের দিকে আহ্বান করা, যার ভিত্তি যুক্তিতর্ক। এগুলো ফলাফলহীন পরস্পরবিরোধী কাজ, এসবের ভিত্তি জাল ও দুর্বল দলিল কিংবা সুস্পষ্ট দলিলের অপব্যাখ্যা। এগুলো শরিয়তের মহান লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইবাদত-বন্দেগিতে একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে ডাকা, কিছু চাইলে শুধু তার কাছেই চাওয়া, কোনো কিছু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলে দ্ব্যর্থহীন চিত্তে তারই কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা ইমানের দাবি। পবিত্র কোরআনে বান্দাদের আহ্বান করে আল্লাহতায়ালা এ কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ -সুরা আল গাফির: ৬০

সুখ-শান্তি ও নিয়ামত দাতা, শাস্তি ও যাবতীয় বিপদ-আপদ প্রতিরোধকারী আমাদের স্রষ্টা ও রব আরও বলেন, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাকো, নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আল আরাফ: ৫৫

কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে মুসলমানদের কর্তব্য হলো, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ-আপদ এবং প্রয়োজন পূরণে রবের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা। যে মৃত ব্যক্তি কিংবা অনুরূপ কিছুর দ্বারস্থ হয়, সে স্থায়ী ধ্বংস ও শাস্তিতে নিপতিত হয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার এ বাণীর চেয়ে অধিক বোধগম্য ও সুস্পষ্ট বাণী আর পাওয়া যাবে না। যেখানে বলা হয়েছে, ‘আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি কাছে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ -সুরা আল বাকারা: ১৮৬

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে ইলম শিক্ষাদানে এমন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যার সঙ্গে কারও তুলনা নেই। তার দেওয়া শিক্ষা ও উম্মতের প্রতি অসিয়ত হলো, মানুষের অন্তরসমূহ একমাত্র আল্লাহর অভিমুখী হবে এবং বান্দা তার অভাব ও প্রয়োজন একমাত্র তার (আল্লাহর) কাছে ব্যক্ত করবে। সর্বাবস্থায় গায়রুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও) ইবাদত থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। কেননা এটা এমন শিরক, যা আমল ও ইবাদতকে বিনষ্ট করে দেয় এবং দ্বীন থেকে বের করে দেয়। আর দোয়া হলো কল্যাণ ও সুখ কামনা এবং বালা-মুসিবত ও ক্ষতি দূর করার প্রত্যাশা করা। কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, দোয়া একটি ইবাদত। সুতরাং দোয়া একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উদ্দেশ্যে করা বিধেয় নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ তোমাদের রব। আধিপত্য তারই। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকো, তারা তো খেজুর আঁটির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদের ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তোমরা তাদের যে শরিক করেছ তা তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞ আল্লাহর মতো কেউই আপনাকে অবহিত করতে পারে না।’ -সুরা ফাতির: ১৩-১৪

বর্ণিত আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ ছাড়া জীবিত, মৃত কেউ কারও প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। শুধুমাত্র এক আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, যিনি সর্বশক্তিমান এবং সব কিছুর মালিক। আপনি নামাজের প্রতি রাকাতে যা পাঠ করেন, সেটাকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করুন। সেটা হলো, ‘আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ -সুরা ফাতিহা: ০৫

দ্বীনের এই শক্তিশালী মূলনীতিকে বিনষ্টকারী যাবতীয় আহ্বান ও আয়োজন থেকে সতর্ক থাকুন। যদি সব ধরনের ভীতিকর বিষয় থেকে পরিত্রাণ পেতে চান, কাক্সিক্ষত সব বস্তু অর্জন করতে চান; তাহলে কোরআন মাজিদের নির্দেশনা এবং নবী-রাসুলদের সর্দার মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রদত্ত শিক্ষার অনুসরণ অপরিহার্য। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা হলো- নবী-রাসুলদের পথে চলা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বদরের যুদ্ধে সংকটপূর্ণ অবস্থায় মহান রবের কাছে নিভৃতে দোয়া করেছিলেন। যা আমাদের রব জানিয়েছেন, ‘স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, অবশ্যই আমি তোমাদের সাহায্য করব এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে, যারা একের পর এক আসবে।’ -সুরা আল আনফাল: ০৯

হাদিসে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জবানে উচ্চারিত দোয়াগুলো ‘রাব্বানা’, ‘আল্লাহুম্মা’, ‘ইয়া হাইয়্যু-ইয়া কাইয়্যুম’, ‘ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম’ শব্দাবলি দ্বারা শুরু হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাকে সেসব নামেই ডাকো।’ -সুরা আল আরাফ: ১৮০

নবী কারিম (সা.)-এর সময়ে কিংবা পরে সাহাবাদের থেকে এমন কোনো ঘটনা বর্ণিত হয়নি যে, তারা বলেছেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের সাহায্য করুন।’ অথচ তারা বালা-মুসিবত ও বিপদাপদপূর্ণ অসংখ্য ঘটনা এবং পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিষয়গুলো সামনে রেখে ওই সব চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান-ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে, যা বুদ্ধি-বিবেককে অবজ্ঞা, চিন্তাভাবনাকে কলুষিত এবং নিষ্কলুষ তাওহিদ ও বিশুদ্ধ আকিদাকে ক্ষতবিক্ষত করে। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে- ‘আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কেউ কল্যাণ আনয়ন ও তার থেকে অকল্যাণ দূর করতে পারে বা তার প্রয়োজন পূরণের ক্ষমতা রাখে’; সে মূলত আল্লাহ ও তার মাঝে মাধ্যম নির্ধারণ করে তাদের ডাকে, তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এর ফলে সে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে, মুক্তির আশাকে দূরে সরিয়ে দেয়, সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত হয় এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয় এমন বড় শিরকে পতিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা তো তাদের ইবাদত এ জন্য করি যে, এরা আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দেবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে সে ব্যাপারে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফের, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন না।’ -সুরা আয যুমার: ০৩

মুমিন-মুসলমান কোনোভাবেই ওই পথে চলবে না যারা তাওহিদকে প্রশ্নবিদ্ধ, আমলকে নষ্ট ও আকিদাকে বিভ্রান্ত করে। তাদের অনুসরণ করা যাবে না, যারা কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা এবং নবী-রাসুলদের পথ থেকে মানুষকে বিমুখ করতে চায়। যারা বিভিন্ন যুক্তি ও শব্দের আড়ালে বেদয়াতি বানায়। মহান রবের নাজিলকৃত গ্রন্থ এবং আমাদের নবী ও আদর্শ মুহাম্মাদ (সা.)-এর দিক-নির্দেশনা দিবালোকের সূর্যের মতো উজ্জ্বল, সে বিষয়ে সবার মনোযোগী হওয়া উচিত। যে পথের দিশার জন্য নবী আইয়ুব (আ.) রবকে নিভৃতে ডেকেছিলেন। নবী ইউনুস (আ.) সমুদ্রের গভীরে মাছের পেটে থেকে মহান রবের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। হজরত জাকারিয়া (আ.) অনুনয় করেছিলেন এবং অবনত হয়েছিলেন তার রবের কাছে। যে সত্তার হাতে রাজত্ব, যে সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান, তিনি নবী-রাসুলদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন, তাদের অনুগ্রহ করেছিলেন। সুতরাং আপনারাও হেদায়েতের পথ অবলম্বন করুন। আল্লাহর একত্ববাদের সংরক্ষণ করুন। তাদের প্রতি কোনোভাবেই আকৃষ্ট হওয়া যাবে না, যারা খারাপ ও ভ্রষ্টতার পথে নিয়ে যায়।

ইমানের মর্মকথা হলো, একমাত্র আল্লাহকেই ডাকা, একমাত্র তারই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা। সুতরাং ওই ব্যক্তি কীভাবে সফলকাম হবে যে গায়রুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে? যত বিপদই আসুক না কেন, যত ক্ষতির সম্মুখীনই হোন না কেন, আপনার দুই হাত মহান স্রষ্টার কাছে উত্তোলন করুন। তার কাছে একনিষ্ঠতা ও সততার সঙ্গে মিনতি করে দোয়া করুন। তার এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে দোয়া করুন, ‘কে আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে (বান্দা) তাকে (আল্লাহকে) ডাকে এবং (দয়াময় আল্লাহ) বিপদ-আপদ দূর করেন এবং তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন? আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ (উপাস্য) আছে কি? তোমরা খুব অল্পই শিক্ষা গ্রহণ করে থাক।’ -সুরা আন নমল: ৬২

কোরআন মাজিদে বর্ণিত হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর এই উক্তি স্মরণ করে দোয়া করুন, ‘আর আমি যখন অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন।’ -সুরা আশ শোয়ারা: ৮০

রবের মহা অনুগ্রহের কথা শুনুন যা নবী কারিম (সা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মহান রব প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বলতে থাকেন, কে আমার কাছে দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

৯ ডিসেম্বর শুক্রবার, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা।/অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION